বিষ্ণু পুরান অনুযায়ী সৃস্টি রচনা

প্রথমেই ওম্ নম্হ ভগবতে বাসুদেবায় বলে শুরু করছি । প্রথমে এই মহাবিশ্বে কিছুই ছিল না সম্পূর্ন শূন্য ছিল । সেই শূন্যতার সৃষ্টি মহা জ্যোতি পূন্জ থেকে । সেই জ্যোতি ধীরে ধীরে মানুষ রূপ ধারন করে ।সেই আদি পূরুষ হচ্ছে ভগবান নারায়ন । তারপর নারায়ন যোগ নিদ্রায় মগ্ন হয় ।সেই যোগ নিদ্রা থেকে ব্রক্ষ জল নির্গত হয় ও ক্ষীর সাগরের তৈরী হয় । এরপর শ্রী নারায়নের নাভী থেকে একটি পদ্মফুলে
র কলি সৃষ্টি হয় এবং নারায়নের একটি প্রতিরুপ গিয়ে ঐ পদ্মফুলকে প্রস্ফুটিত করে ।








ঐ পদ্মথেকে ব্রক্ষার সৃষ্টি হয় । এরপর নারায়নের ভ্রকুটি থেকে একটি রুদ্রাক্ষের সৃষ্টি হয় । পরে নারায়নের একটি প্রতিরূপ গিয়ে তার বিষ্ফোরন ঘটিয়ে শিবের সৃষ্টি করে । এরপর ব্রক্ষা ও শিব নারায়নের স্তুতি করে ও তাদের পরিচয় জানতে চান , তারা বলেন হে জগদীশ জন্মযখন দিয়েছেন পরিচয়ও দিন । তখন শ্রী নারায়ন মধুর হাসি হেসে বলেন আমিও যা আপনারাও তা । আমার প্রতিরূপ আপনারা । হে পন্ঞ্চমুখি আপনি ব্রক্ষা(ব্রক্ষা প্রথমে পাঁচ মুখ বিশিষ্ট ছিল এরপর শিব ত্রিশূল দিয়ে একবার ব্রক্ষার একটি মস্তক কাটেন ও ব্রক্ষার পূজা নিশিদ্ধ করেন ) আর হে জটাধারী হে ত্রিনেত্রেশ্বর আপনি শিব । আমরা তিনজন ত্রিদেব ।
শ্রী নারায়নের এই উত্তরের পর ব্রহ্মা ও শিব তাদের জন্মের উদ্দেশ্য জানতে চাইলেন । তখন শ্রী নারায়ন বল্লেন হে ব্রহ্মা , হে মহেশ এই সংসারে জন্ম নিলে তাকে কর্মও করতে হয় ।আপনাদেরও কর্ম করতে হবে । হে ব্রহ্মা আপনি সৃষ্টিকর্তা আপনি সৃষ্টি করবেন । আর হে মহেশ আপনি সংহার কর্তা আপনি সংহার করবেন । আর আমি নারায়ন যখন নিরাকার রূপ থেকে সাকার রূপ ধারন করেছি তখন আমাকেও কর্মকরতে হবে । আমি বিষ্ণু রুপে জগতের পালন করব । হে ব্রহ্মা আপনি গিয়ে সৃষ্টি রচনার প্রারম্ভ করুন । এরপর ব্রহ্মা ও শিব প্রস্হান করলেন । এরপর শ্রী বিষ্ণু শেষ নাগের শয্যা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে প্রনব মন্ত্র ওম এর উচ্চরন করলেন । তখন তার বাম হাত থেকে মা মহালক্ষী আবির্ভূত হল । তখন মা মহালক্ষী শ্রী নারানকে বললেন হে পরমশেষ্ঠ আপনি নিজেই তো সম্পূর্ন ছিলেন তবে আমায় কেন সৃষ্টি করলেন । তখন শ্রী বিষ্ণু মধুর হাসি হেসে বললেন আমি জানি আমি সমূর্ন আমি সেই প্রদীপের মত পূর্ন যার থেকে অন্য প্রদীপ জালালেও তার পূর্ন আলো পূর্নই থাকে তবু হে প্রিয়া চাঁদ যেমন চাঁদনী ছাড়া , ফুল যেমন সুগন্ধ ছাড়া , সূর্য যেমন তেজ ছাড়া অপূর্ন তেমনি আমিও তোমাকে ছাড়া অপূর্ন । আর আজ থেকে আমি ঘোষনা করছি যে কোন পুরুষ নারীকে ছাডা সম্পূর্ন হবে না আর এই সম্পূর্নতাই নতুন প্রজন্মকে জন্ম দিবে । আর তোমাকেও একটি বর দিচ্ছি আমার নাম আজ থেকে লক্ষীপতি এবং আমার নারায়ন নামের পূর্বে তোমার নাম যুক্ত হবে ।আমার নাম আজ থেক লক্ষীনারায়ন । তখন মা লক্ষী বলল তোমায় কোটি কোটি প্রনাম শ্রী হরি এবার আমার কাজ বলে দাও । শ্রী বিষ্ণু বল্লেন তুমি আমার প্রেরনা । আমি তোমার কাছ থেকে প্রেরনা পেয়েই সৃষ্টি পালন করব । আর তুমি ব্রহ্মা সৃষ্ট প্রানীদের উপর ধনের বর্ষা করবে । এরপর শ্রী নারায়ন ব্রহ্মার কাজে সহায়তার জন্য যোগ নিদ্রায় মগ্ন হলেন এবং যোগের মাধ্যমে ব্রহ্মাকে শক্তি প্রদান করতে থাকলেন ।
ভগাবান শ্রী বিষ্ণুর এবং ব্রক্ষার শক্তি একত্রিত হয়েও সৃষ্টি রচনার কাজ অগ্রসর হচ্ছিল না । এটাও প্রকৃত পক্ষে শ্রী বিষ্ণুর লীলারই অংশ ছিল ।এদিকে সৃষ্টি রচনার কাজ আগাচ্ছে না দেখে ব্রক্ষা বিষ্ণুর শরনাপন্ন হলেন ।তখন বিষ্ণু যোগ নিদ্রা মগ্ন ছিলেন । ব্রক্ষা গিয়ে বিষ্ণুর স্তব করতে লাগলেন । বিষ্ণু স্তবে খুশি হয়ে চোখ খুললেন । ব্রক্ষা বিষ্ণুকে বলল হে ক্ষিরসাগর বাসী কমল নয়ন রক্ষা কর । বিষ্ণু তার সুমধুর হাসি হেসে বললেন শান্ত হোন আদি প্রজাপতি শান্ত হন ।অধীরতা ত্রিদেবের মাঝে শোভা পায় না । ব্রক্ষা বললেন কিভাবে শান্ত হব জগদীশ বলুন ।।আমি সৃষ্টি করার জন্য জন্ম নিয়েছি । কিন্তু আমার এবং আপনার শক্তি মিলেও তো এই মহান কার্যকে রূপ দিতে পারছে না । এভাবে চলতে থাকলে তো আমার জন্ম বৃথা হয়ে যাবে ।আমাকে এই সংকট থেকে বাঁচান প্রভু । নারায়ন হাসলেন । বললেন আপনি সৃষ্টি কর্তা ,আমি পালন কর্তা কিন্তু আমরা ছাড়াও আর একজন আছে যার কাছে একটা মহান কাজের দায়িত্ব আছে । মহাদেব । আপনি তার কাছে যান । তিনি আপনাকে সহায়তা করবে ।আর তখনি সৃষ্টি রচনার কাজ সার্থক হবে । কারন সৃষ্টির অর্থই জন্ম পালন এবং ধ্বংস । তিনি সংহার কর্তা । তার শক্তিই সৃষ্টি রচনাতে সাহায্য করবে ।শ্রী বিষ্ণুর আদেশে ব্রক্ষা শিবের কাছে গেলেন এবং তাকে শ্রী বিষ্ণুর কথা ও অনুরোধ জানালেন । শিব তখন যোগের মাধ্যমে শিব এবং শিবা এই দুই খন্ডে ভাগ হয়ে গেলেন । এই শিবাই আদি শক্তি । এরপর ত্রিদেবের একত্রিত শক্তি দিয়ে নক্ষত্র . গ্রহ , উপগ্লহ , জীব ও জড় তৈরী করলেন ।এদিকে বিষ্ণু যখন যোগ নিদ্রা মগ্ন থেকে ব্রক্ষাকে শক্তি দিচ্ছিল তখন তার কান থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুটো অসুর জন্ম নিল । তারা প্রচন্ড শক্তিশালী ছিল ।তারা আক্রমন ব্রক্ষাকে আক্রমন করল । ব্রক্ষা তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বিষ্ণুর শরনে এলেন এবং বিষ্ণু তাদের গদা প্রহারে হত্য করল । গদার আঘাতে এই বিশালদেহী অসুরদের মেদ ছড়িয়ে পরল । তখন বিষ্ণুর আদেশে ব্রক্ষা এই মেদ বা চর্বি দিয়ে পৃথিবী সৃষ্টি করলেন । এজন্য পৃথিবীর অপর নাম মেদিনী ।
সমগ্র জড় জগত্‍ সৃষ্টির পর ব্রক্ষা তার চার হাত থেকে চারজন ছোট ছেলেকে তৈরী করলেন । তাদের নাম সনদ ,সনাতন ,সনন্দন ও সনদকুমার । ব্রক্ষা তাদের সৃষ্টি পরিচালনা ও বংশবিস্তার করতে আদেশ দিলেন । কিন্তু তাদের ইচ্ছার অভাব ছিল তাই তারা এতে অপারগতা প্রকাশ করে । যার ফলে ব্রক্ষা ক্রুদ্ধ হয় এবং তাদের দূর করে দেন ব্রক্ষলোক থেকে । এবার ব্রক্ষা ভাবলেন সৃষ্টি রচনার আগে প্রয়োজন ভাল শিক্ষকের তাই তিনি সপ্তর্ষিকে তৈরী করলেন ।এরপর তৈরী করলেন ব্রক্ষার মানসপুত্র দক্ষ এবং নারদকে । তিনি দক্ষকে প্রজাপতি নিযুক্ত করলেন এবং দেবর্ষি নারদকে ভগবত ভক্তি প্রচারের নির্দেশ দিলেন । এবার তৈরী করলেন মনু ও শতরুপাকে ।এই মনু ও শতরুপাই আমাদের আদি পিতামাতা ।
এরপর ব্রক্ষার মনেহল যে তিনি এই মহান সৃষ্টি রচনা করেছেন । তার মনে অহংকার তৈরী হল ।তখন শিব দেখলেন এই অহংকার ঠিক না এতে করে সৃষ্টিতেও অরাজকতা তৈরী হবে তাই তিনি ব্রক্ষার নিকটে গেলেন । কিন্তু ব্রক্ষার অহংকার এতটা চরমসীমায় পৌছে গিয়েছিল যে শিব শত চেষ্টা করেও বোঝাতে পারলেন না ব্রক্ষাকে ।ব্রক্ষা একসময় শিবের অপমান করতে শুরু করলেন । তখন শিব ক্রুদ্ধ হয়ে মহারুদ্র রুপ ধারন করে তার ত্রিশুল ব্রক্ষার দিকে নিক্ষেপ করলেন যা ব্রক্ষার একটি মস্তক কেটে ফেলল ।ব্রক্ষাকে শিব সবধরনের পূজা অর্চনা থেকে বহিস্কার করলেন । ব্রক্ষা মস্তক কাটার পরে ভগবান সদা শিবের স্বরূপ চিনলেন । তিনি শিবের স্তব করতে লাগলেন । শিব খুশি হলেন । তিনি বললেন ব্রক্ষাকে হে আদি প্রজাপতি অহংকার পতনের মুল ।আপনার পন্ঞ্চম মাথাটি ছিল অহংকারের স্বরুপ যা আমি কেটে ফেলেছি । আপনার অহংকার সমূলে নাশ হয়েছে । এটা বলে শিব অন্তর্ধান হয়ে গেল । ব্রক্ষার পুত্রদের মধ্যে সপ্তর্ষি এবং নারদ বুঝেছিলেন যে শিব ব্রক্ষার মঙ্গলেই তার মাথা কেটেছান ।এই মাথাটা না কাটল অহংকারের কারনে ব্রক্ষা ত্রিদেব হওয়ার মর্যাদা হারাতেন । কিন্তু ব্রক্ষা পুত্র দক্ষ এটা বুঝলেন না । তিনি শিবকে শত্রু ভাবতে লাগলেন ।

Comments

  1. এটার বাকী অংশ কই

    ReplyDelete
  2. please post korun baki kahini

    ReplyDelete
  3. খুবই ভালো লাগলো......কিনতু কিছু কম কম লাগলো.....

    ReplyDelete
  4. ‌নিরাকার থে‌কে সাকার হয় না

    ReplyDelete
  5. বাকি টা কোথায়

    ReplyDelete
  6. সমৃদ্ধশালী হলাম

    ReplyDelete
  7. সকল কিছু অস্পষ্ট। বিষ্ণু পূরাণের অনেক অংশই শিব পূরাণ থেকে নেয়া। প্রকৃত পক্ষে বিষ্ণু পূরাণ শিব পূরাণের একটা খন্ডিত বিকৃত রূপ মাত্র।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার জ্ঞান পরিপূর্ণ নয়,18 টি পুরান এর বেশির ভাগ টাই বিষ্ণুকে সমর্পিত, সবচেয়ে প্রচলিত পুরান শ্রীমাদ্ভাগবত,ওটা পরে দেখবেন,আমি সব কটি পুরান পরেই বলছি

      Delete
    2. শিব পুরান আর লিঙ্গ পুরান এ শিব কে সব দেখানো আর বিষ্ণু পুরান, রামায়ণ ,মহাভারত আর বাকি পুরান গুলো তে শ্রী বিষ্ণু কে শ্রেষ্ঠ দেখানো হয়েছে

      Delete
    3. দুজনই শ্রেষ্ঠ, দুজনেই দুজনের আরাধ্য

      Delete
  8. সকল কিছু অস্পষ্ট। বিষ্ণু পূরাণের অনেক অংশই শিব পূরাণ থেকে নেয়া। প্রকৃত পক্ষে বিষ্ণু পূরাণ শিব পূরাণের একটা খন্ডিত বিকৃত রূপ মাত্র।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার এই বিষয়ে জ্ঞানের অভাব আছে।
      বিষ্ণু পুরান সর্ব প্রথম রচিত। শিব পুরান পরে তৈরি করা হয়।
      প্রাণের সৃষ্টির পরেই শিব পুরান হয় কিন্তু ব্রম্ভান্ডের শুরুর আগে থেকেই বিষ্ণু পুরান প্রারম্ভ হয়।
      আপনার কথাটা উল্টো হবে

      Delete
  9. আমি ভালোবাসি ভগবানকে তাই আরো সব জানতে ।

    ReplyDelete
  10. আমি সুজন পাহাড়িয়া

    ReplyDelete
  11. সনাতন ধর্ম ও ভারতদেশ এ সনাতন ধর্মের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সাইট এ প্রবেশ করুন।
    www.sanatanblog.com

    ReplyDelete
  12. ওঁ নমঃ শিবায় ঠিক আছে তো কিছু কিছু জায়গায় আরো আলোচনা করা উচিত ছিল বলে আমার মনে হয়। তবে শিব পুরান থেকে কিছু আলোচনা করা হয়নি ওঁ নমঃ শিবায়

    ReplyDelete
  13. দয়া করে বৈষ্ণব আর শৈব রা তর্ক করবেন না, তাতে বিধর্মীরা সুযোগ পাবে আমাদের ধর্মকে ছোট করার

    ReplyDelete

Post a Comment