ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য ( ৬ পর্বের পর)

পর্ব - ৭ 
ব্রহ্মান্ডগুলি কিভাবে মহাশূন্যে উথিত হয় (What is the procedure of Universe)

এ যাবৎ আমরা আলোচনা করে দেখলাম ব্রহ্মান্ডগুলি হাজার হাজার বছর ধরে বুদবুদের আকারে কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত আছে ।

 আমরা জানি, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের গোলকের অর্ধেক চিন্ময় জল দ্বারা পূর্ণ, বাকী উপরের অর্ধেক ফাঁকা মহাশূন্য । মহাবিশ্বের কোন দিক উপর আর কোন দিক নীচে সেটা নির্ণয় করা হয় চিন্ময় জগতের সর্বোচ্চ গ্রহ গোলক বৃন্দাবনের সাথে তুলনা করে, গোলক বৃন্দাবন সবার উপরে অবস্থিত, আমাদের মহাবিশ্ব চিন্ময় জগতের নীচে অবস্থিত । সেজন্য মহাবিশ্বের গোলকের অর্ধেক জল দ্বারা পূর্ণ অংশকে বলা হয় বিশ্বব্রহ্মান্ডের নিম্নভাগ আর উপরের ফাঁকা জায়গায় নাম



উপরিভাগ । ব্রহ্মান্ডগুলি হাজার হাজার বছর কারণ সমুদ্রে নিমজ্জিত থাকবার পর মহাবিষ্ণু থেকে একটি শক্তি বাহির হয়ে প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করেন এর নাম ‘গর্ভোদকশক্তি’ ।

ব্রহ্মান্ডের গোলক ১০০০ বছর কারণ সমুদ্রে থাকে । সোহশয়িষ্টাব্ধিসলিলে আন্ডকোশো নিরাত্মকঃ সাগ্রং বৈ বর্ষসাহস্রমন্ববাৎসীত্তমীশ্বরঃ (ভাগবত ৩/২০/১৫)

অনুবাদ
সেই হিরন্ময় অন্ডটি অচেতন অবস্থায় এক সহস্র বৎসরেরও অধিক কাল কারণ সমুদ্রের জলে শায়িত ছিল । তারপর ভগবান গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে তাহাতে প্রবেশ করেন । এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে ব্রহ্মান্ডরূপী যে বুদবুদ সেটা অচেতন বা মৃতরূপে ১০০০ (এক হাজার) বছরের বেশি সময় কারণ সমুদ্রের জলে ছিল । তারপর সেটাকে জীবন্ত করবার জন্য ভগবানের একটি শক্তি সেই ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করলেন, এই শক্তির নাম ‘গর্ভোদকশক্তি’ । যখন বুদবুদ রূপ ব্রহ্মান্ডের মধ্যে শক্তি প্রবেশ করল তখন ব্রহ্মান্ডটি কার্যশীল হল ।

গর্ভোদক শক্তি ব্রহ্মান্ডগুলিতে প্রবেশ করবার পর এই শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত হয় ।
১। অনন্ত শক্তি
২। পরমাণু শক্তি

ভগবানের শক্তি দুই ভাগে বিভক্ত হল একোহপ্যসৌ রচয়িতং জগদন্ডকোটিং যচ্ছক্তিরস্তি জগদন্ডচয়া যদন্তঃ অন্ডান্ত রস্থপরমাণুচয়ান্তরস্থং গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম সংহিতা ৫/৩৫)

অনুবাদ
আমি পরমেশ্বর ভগবান গোবিন্দের ভজনা করি, যিনি তাঁহার এক অংশের দ্বারা প্রতিটি ব্রহ্মান্ড এবং প্রতিটি পরমাণুতে প্রবিষ্ট হইয়াছেন, এইভাবে তিনি সমগ্র সৃষ্টিতে তাঁহার অনন্ত শক্তির প্রকাশ করিয়াছেন । এই শ্লোকে ভগবানের দুইটি শক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে একটি শক্তি প্রতিটি ব্রহ্মান্ডে প্রবেশ করেছেন এর নাম অনন্ত শক্তি আর একটি শক্তি প্রতিটি পরমাণুতে প্রবেশ করেছেন এর নাম পরমাণু শক্তি । কারণ সমুদ্রের জলে নিমজ্জিত ব্রহ্মান্ডগুলি যখন এইভাবে অনন্ত শক্তির দ্বারা প্রভাবিত হয়, তখন ব্রহ্মান্ডগুলি মহাশূন্যে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয় । কারণ সমুদ্রের জলে অবস্থানরত কোটি কোটি ব্রহ্মান্ডগুলি কার্যশীল হওয়ার পর সমুদ্রে অবস্থিত মহাবিষ্ণু যখন শ্বাস ত্যাগ করেন তখন সমস্ত ব্রহ্মান্ডগুলি অনন্তশক্তির প্রভাবে মহাশূন্যে গমন করতে থাকে ।

ব্রহ্মান্ডগুলি মহাশূন্যে উথিত হওয়া যস্যৈকনিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলজা জগদন্ডনাথাঃ বিষ্ণূর্মহান্ স ইহ যস্য কলাবিশেষো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি ।। (ব্রহ্ম-সংহিতায় ৫/৪৮)

অনুবাদ
মহাবিষ্ণু বা কারণার্ণবশায়ী বিষ্ণুর একটি নিঃশ্বাসের মাধ্যমে অনন্ত ব্রহ্মান্ড সমূহ প্রকাশিত হয়, আর সেই মহাবিষ্ণু হইতেছেন পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দের একটি অংশ মাত্র ।

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে অনন্ত ব্রহ্মান্ড সমূহ মহাবিষ্ণুর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে মহাশূণ্যে গমন করছে । মহাশূন্যে ব্রহ্মান্ডপূঞ্জ বা ছায়া পথগুলি যাওয়ার পর মহাবিষ্ণুর শ্বাস ত্যাগের শক্তিতে অপসরণ হওয়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে সমস্ত মহাশূন্যে স্থান দখল করে, এর নাম মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ । একে বিজ্ঞানীরা প্রসারমান মহাবিশ্ব (Expanding Universe) বলে । 








পর্ব-৮ 

ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ (The Vedic Concept of Expanding) ভাগবতের আলোকে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের প্রকারভেদ দেখানো হল মহাবিশ্বের ব বিশ্বব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ ২ ভাবে হয়
১) বিশ্বব্

রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ
২) ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ

বিশ্বব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ আবার ২ ভাবে হয়
ক) ব্রহ্মান্ডের আয়তনের সম্প্রসারণ
খ) বিশ্বব্রহ্মান্ডের আবরনের সম্প্রসারণ এখানে ব্রহ্মান্ডের আয়তনের সম্প্রসারণ থেকে মহাশূন্যে ব্রহ্মান্ডপুঞ্জ বা ছায়াপথের সম্প্রসারণ হয় ।

আবার ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ ২ ভাবে হয়
১) বিশ্বব্রহ্মান্ডের গোলকের সম্প্রসারণ এখানে বিশ্বব্রহ্মান্ডের গোলকের সম্প্রসারণ থেকে ব্রহ্মান্ডের ভিতরে গ্রহ নক্ষত্রের সম্প্রসারণ
২) বিশ্বব্রহ্মান্ডের আবরণের সম্প্রসারণ

আমরা আজকে আলোচনা করব ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ ব্রহ্মান্ডের সম্প্রসারণ (Expansion of Universe)

১) ব্রহ্মান্ডের গোলকের সম্প্রসারণ ব্রহ্মান্ডগুলি কারণ সমুদ্রের জলে বুদবুদের আকারে সৃষ্টি হয় । পরবর্তীতে এই বুদবুদের মধ্যে ভগবানের একটি শক্তি প্রবেশ করে, ইহার নাম গর্ভোদক শক্তি, বুদবুদ রূপ ব্রহ্মান্ডের মধ্যে যখন শক্তি প্রবেশ করে তখন ব্রহ্মান্ড সম্প্রসারিত হয়ে নিজস্ব আকার ধারণ করে । এই সম্প্রসারণ প্রক্রিয়া কারণ সমুদ্রে হয় এবং এর জন্য্ কোটি কোটি বছর সময় লাগে । ব্রহ্মান্ডের ভিতরে গ্রহ নক্ষত্রের সম্প্রসারণ (Expansion of Planets in Universe) প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে একটি করে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয় । প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের আয়তন ভিন্ন রকমের যেমন আমরা যে ব্রহ্মান্ডে বাস করি এর মধ্যের আয়তন ৫০ কোটি যোজন বা ৪০০ কোটি মাইল । এভাবে প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে নির্দিষ্ট আয়তনের ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয় । এই নির্দিষ্ট জায়গা সৃষ্টির জন্য বুদবুদ বা ব্রহ্মান্ডগুলির সম্প্রসারণ হতে হয় । প্রতিটি ব্রহ্মান্ডের মধ্যে অসংখ্য গ্রহ, নক্ষত্র তৈরী হয় সেগুলি সম্প্রসারিত হয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান নেয়, এভাবে ব্রহ্মান্ডের ভিতরে সম্প্রসারণ ঘটে থাকে ।

২) ব্রহ্মান্ডের আবরণের সম্প্রসারণ ( Expansion of the covering of Universe) আমি ব্রহ্মান্ড আলোচনা পর্বে ব্রহ্মান্ডের আবরণ সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করেছি । প্রতিটি ব্রহ্মান্ড গোলক ৭ টি আবরণ দ্বারা আবৃত, প্রতিটি আবরণ পূর্বটি অপেক্ষা ১০ গুণ অধিক চওড়া ।

ব্রহ্মান্ডের আবরণের বর্ণনা তদন্ডং বিশেষাখ্যং ক্রমবৃদ্ধৈর্দশোত্তরৈঃ ।
তোয়াদিভিঃ পরিবৃতং প্রধানেনাবৃতৈর্বহিঃ যত্রলোকবিতানোহয়ং রূপং ভগবতো হরেঃ (ভাগবত ৩/২৬/৫২)

অনুবাদ
এই ব্রহ্মান্ডকে বলা হয় জড়া প্রকৃতির প্রকাশ তাহাতে জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, অহংকার এবং মহত্তত্ত্বের যে আবরণ রহিয়াছে, তাহা ক্রমান্বয়ে পূর্বটির থেকে পরবর্তী আবরণটি দশ গুণ অধিক এবং তাহার শেষ আবরণটি হইতেছে প্রধানের আবরণ । এই ব্রহ্মান্ডে ভগবানের বিরাটরূপ বিরাজ করিতেছে, যাহার দেহের একটি অংশ হইতেছে চতুর্দশ ভুবন ।

এই শ্লোকে ব্রহ্মান্ডের ৭ টি আবরণের নাম ও কোনটি কি পদার্থ দ্বারা তৈরী সেটা বর্ণনা করা হয়েছে ।

এভাবে ব্রহ্মান্ডের আবরণগুলি প্রথম আবরণ থেকে ৭ম আবরণ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত হতে থাকে । এই সম্প্রসারণের জন্য লক্ষ লক্ষ বছর সময় লাগে । এখানে প্রথম ৪ টি আবরণ জল, আগুন, বায়ু, আকাশ এগুলি সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের ধারণা আছে কিন্তু পরের অহংকার, মহতত্ত্ব, প্রধান এই তিনটি আবরণ সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের কোন ধারনা নাই, বিজ্ঞানীরা আকাশ বা ইথারকে সবচেয়ে সূক্ষ্ম পদার্থ হিসাবে বিবেচনা করছে । কিন্তু ভাগবত বলছে আরো সূক্ষ্মতম পদার্থ রয়েছে যেমন অহংকার, মহতত্ত্ব ও প্রধান । এগুলি এতো সূক্ষ্ম যে সাধারন বিজ্ঞান দিয়ে এগুলি উপলব্ধি করা যায় না । সেজন্য আকাশ, অহংকার, মহতত্ত্ব, প্রধানকে সাধারন বিবেচনায় শূন্যস্থান বলা যেতে পারে ।

আমাদের ব্রহ্মান্ডের আবরনের পর শূন্যস্থানের পরিমাণ

আকাশ = ১০০০০ X যোজন অহংকার = ১০০০০০ X যোজন মহতত্ত্ব = ১০০০০০০ X যোজন প্রধান = ১০০০০০০০ X যোজন মোট = ১১১১০০০০X যোজন বা ১১১১০০০০ × ৫০ কোটি যোজন [আমাদের ব্রহ্মান্ডের ব্যাস = ৫০ কোটি যোজন] বা ১১১১০০০০ × ৫০ × ৮ কোটি মাইল [১ যোজন=৮ মাইল] বা ৬৮২৫ আলোকবর্ষ (মোটামুটি)

সুতরাং বলা যেতে পারে আমাদের ব্রহ্মান্ডের আবরণের পর শূন্যস্থানের পরিমাণ প্রায় ৬৮২৫ আলোক বর্ষ । এ হিসাব থেকে বলা যেতে পারে বিজ্ঞানীরা দুটি ব্রহ্মান্ড বা নীহারিকার মধ্যবর্তী যে বিশাল ফাঁকা জায়গা দেখতে পাচ্ছেন সেই ফাঁকা জায়গায় উৎস এই বিষয়টি, এভাবে ব্রহ্মান্ডের আবরণগুলি যখন সম্প্রসারিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ ব্রহ্মান্ডের রূপ ধারণ করে তখন ব্রহ্মান্ডগুলি কারণ সমুদ্রে ভাসতে থাকে । অর্থাৎ ব্রহ্মান্ডগুলি পানির তুলনায় হালকা হয়ে যায় এবং ইহা মহাশূন্যে ভাসমান হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে । পরবর্তী পোষ্টে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা করা হবে ।



পর্ব-৯
সংক্ষেপে বিজ্ঞানীদের বুদবুদ তত্ত্বের উল্লেখ করছি (A Brife concept about Bubbling theory) ম্যাসচুসেটস্ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির বৈজ্ঞানিক অ্যালান গুথ (Alan Guth)-এর চেষ্টা ছিল মহাবিশ্বের এমন এক
টি প্রতিরূপ অন্বেষণ করা, যে প্রতিরূপে বহু প্রাথমিক আকার বিবর্তনের ফলে আধুনিক মহাবিশ্বের মতো একটি জিনিস সৃষ্টি হয়েছে । গুথের এই আলোচনা থেকে বুঝা যায় মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে বহু প্রাথমিক আকার থেকে পরবর্তীতে সেই প্রাথমিক আকারগুলি বিবর্তনে মাধ্যমে বর্তমান মহাবিশ্বের সৃষ্টি করেছে । গুথের এই ধারণা বুদবুদ তত্ত্বের জন্ম দিয়াছে । মহাবিশ্বের যে প্রাথমিক অবস্থা ভিন্ন ভিন্ন ছিল, সেটা ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে প্রতিটি বুদবুদ বিবর্তনেরর মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ ব্রহ্মান্ডে পরিণত হয় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানী গুথের ধারণা ভাগবতের ধারণার সাথে মিল আছে ।

গুথের বুদবুদ তত্ত্বটি হল ফুটন্ত পানিতে যেমন বুদবুদ উঠতে থাকে, ঠিক সেরকম সময়ের নদীতে অসংখ্য বুদবুদ সৃষ্টি হচ্ছে পরবর্তীতে এই বুদবুদগুলি মহাশূন্যে অসংখ্য বিশ্ব বা ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করছে । গুথের ধারনা বুদবুদগুলি একে অন্যের সাথে মিলিত হতে থাকে এবং সবগুলি বুদবুদ মিলিত হয়ে একটি বুদবুদে রিণত হয় যে বুদবুদের মধ্যে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে । গুথ নিজেই তাঁহার তত্ত্বের সমস্যা বর্ণনা করে বলেছেন মহাবিশ্ব এতো দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছিল যে, বুদবুদগুলি যদি আলোকের গতিতে বৃদ্ধি পায় তা হলেও এরা পরস্পর থেকে দূরে অপসারণ করতে থাকবে । সুতরাং বুদবুদ গুলি যুক্ত হতে পারবে না ।

এই সমস্যার সমাধান হিসেবে বিজ্ঞানী হকিং বর্ণনা করেছেন ১৯৮১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি মস্কোতে একটি কণাবাদী মহাকর্ষ (Quantum Gravity) সম্পর্কীয় আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন । শ্রোতাদের ভিতরে মস্কোর লেবেডভ ইন্সিটিটিউটের একজন তরুণ রুশ ছিলেন, তাহার নাম আন্দ্রে লিন্ডে (Andrei Linde)। তিনি মন্তব্য করেছিলেন বুদবুদগুলি সংযুক্ত না হওয়ার অসুবিধা এড়ানো যায় যদি বুদবুদগুলি এতোবড় হয় যে মহাবিশ্বে আমাদের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ একটি বুদবুদের অন্তর্ভূক্ত হয় ।

বিজ্ঞানীদের এই বুদবুদ তত্ত্বের সাথে ভাগবতের বুদবুদের মাধ্যমে সৃষ্টি তত্ত্বের যথেষ্ট মিল রয়েছে । গুথ বলেছেন বুদবুদগুলি সময়ের নদীতে তৈরী হয়েছে, কিন্তু ভাগবতে বর্ণনা রয়েছে বুদবুদগুলি কারণ সমুদ্রের কারণ বারীতে সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞানীরা বুদবুদগুলি এক অন্যের সাথে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে সমস্যার কথা বলেছেন কিন্তু ভাগবতে সেই সমস্যার সমাধান করে বলেছে বুদবুদগুলি একে অন্যের সাথে মিলিত হয় না । প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে একটি করে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়, যার কিছু ধারণা আন্দ্রে লিন্ডে করেছেন। সুতরাং বলা যেতে পারে বিজ্ঞানীরা বুদবুদতত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির যে আংশিক ধারনা ব্যক্ত করেছেন, ভাগবত সেটা অত্যন্ত পূর্ণাঙ্গ ও গঠনমূলকভাবে বর্ণনা করেছে । এখানে উল্লেখ করে রাখা ভাল যে ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে বুদবুদ তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে আর প্রতিটি বুদবুদের মধ্যে যে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি হয়েছে সেটা বিগ ব্যাঙ্গ (Big Bang) বা বৃহৎ বিষ্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে যা আমি পরবর্তীতে আলোচনা করব ।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা বুদবুদ তত্ত্ব এবং বিগ ব্যাঙ্গ তত্ত্ব দুটিকে বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি প্রণালী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন । কিন্তু ভাগবতের বর্ণনা মাধ্যমে সামঞ্জস্যতা লাভ করেছে যা পরে আলোচনা করা হবে । বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করবার চেষ্টা করেছেন সবগুলি বুদবুদ মিলিত হয়ে একটি বড় বুদবুদের মত তৈরী হয়, যার মধ্যে বিশ্বব্রহ্মান্ড বা মহাবিশ্ব অবস্থিত অর্থাৎ মহাবিশ্ব একটি গোলাকার বলের মধ্যে অবস্থিত বা মহাবিশ্বের একটি গোলক রয়েছে । এই বিষয়টি ভাগবতে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে মহাবিশ্ব একটি গোলকের মধ্যে অবস্থিত । মহাবিশ্ব যেহেতু একটি গোলকের মধ্যে অবস্থিত, সেজন্য মহাবিশ্বের স্থানের সীমা রয়েছে আবার ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে এই বিশ্বব্রহ্মান্ডে ব্রহ্মান্ডের সংখ্যা অনন্তকোটি । অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডের অন্য জায়গার প্রয়োজন অনন্ত……….. তা হলে এই বিষয় দুটি পরস্পর বিরোধী হয়ে যায় । এ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে ভাগবতে বর্ণনা করা হয়েছে মহাবিশ্বের গোলক এত বড় যে সেটা মানুষের পক্ষে মাপা বা ধারনা করা সম্ভব নয় । সেজন্য মানুষের কাছে মহাবিশ্বের আয়তন অসীম বলে মনে হবে কিন্তু প্রকৃত বিচারে মহাবিশ্বের একটি গোলাকার বাউন্ডরী রয়েছে ।একে মহাবিশ্বের গোলক বলে, যা বিশ্ব সৃষ্টির সময় তৈরী হয়েছে । এ গোলকের মধ্যে অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ড বুদবুদ আকার অবস্থান করছে । সুতরাং যদি বলা হয় মহাবিশ্বের আয়তন অসীম সেটাও সঠিক আবার মহাবিশ্বের আয়তন অসীম নয় সীমিত সেটাও সঠিক ।

একই সাথে দুটি পরস্পর বিরোধী বিষয় কিভাবে সঠিক হয় সে সম্বন্ধে ভাগবতে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে এর নাম ‘অচিন্ত্য ভেদাভেদ তত্ত্ব’ । এই তত্ত্বের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অচিন্ত্য মানে যা মানুষের কল্পণার বাহিরে অর্থাৎ মানুষ তার সীমিত জ্ঞান দ্বারা বিষয়টি বিবেচনা করতে পারবে না । আর ভেদাভেদ শব্দের অর্থ ভেদ আছে আবার ভেদ নাই অর্থাৎ একই সাথে দুটি পরস্পর বিরোধী ধারনা সঠিক হবে । এর একটি ব্যবহারিক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেমন- এক বিন্দু জল আর সমুদ্র এই দুটি বিষয় একটি বিচারে উভয়ে সমান, সেটা হল গুণগত দিক অর্থাৎ গুণগত দিক দিয়ে এক বিন্দু জলের মধ্যে যা আছে বিশাল সমুদ্রের মধ্যে তা আছে কিন্তু পরিমাণের দিক দিয়ে দুটি বস্তু এক নয় । কোন কোন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বকে অসীম বলে ব্যাখ্যা করেছেন আবার কোন কোন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বকে সসীম বা সীমিত বলে ব্যাখ্যা করেছেন, এই উভয় ধারণা ভাগবতের আলোকে সঠিক ।

আন্দ্রে লিন্ডে নামক একজন রুশ বিজ্ঞানী মন্তব্য করেছেন বুদবুদগুলি সংযুক্ত না হওয়ার অসুবিধা এড়ানো যায় যদি বুদবুদ গুলি এতো বড় হয় যে মহাবিশ্বে আমাদের অঞ্চলটি সম্পূর্ণ একটি বুদবুদের অন্তর্ভূক্ত হয় ।

Comments

  1. সকল প্রাণী তথা সকল মানুষ শান্তি লাভ করুক শুধু হিন্দুরা নয়। ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি ওঁ শান্তি।

    ReplyDelete

Post a Comment